বাংলা বানানে চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। নিয়ম নীতি মানার কোন বালাই নেই। যে যেভাবে ইচ্ছে ঠিক সেভাবে বানান লিখছে। সাইনবোর্ড , ব্যানার, ফেস্টুন, ফেসবুক হোয়াসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোথায়ও সঠিক নিয়ম মেনে বাংলা বানান লেখার তাগিদ নেই। আঞ্চলিক পত্রিকাগুলো বাংলা একাডেমি প্রমিত বানান পদ্ধতি পালনে বড্ড উদাসীন। একটু সচেতন দৃষ্টি দিয়ে খেয়াল করলে বানানের এ নৈরাজ্য যে কারোই চোখে পড়ে।
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি । '৫২ তে বাংলা ভাষার মান রক্ষায় সালাম, রফিক, বরকত ও জব্বারসহ অসংখ্য ভাষা সৈনিক নিজেদের জীবন আত্মদান করলেও মহান ভাষা বাংলার মর্যাদা যথাযথভাবে আজো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। 'শুদ্ধভাবে বাংলা বানান লেখায় উদাসীনতা ভাষার মর্যাদাকে ভুলন্ঠিত করে'-এমনটি মনে করেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষকরা।
উনিশ বিরানব্বই সালে বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানান লিখার জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়। সেই আইনে তৎসম শব্দ, অর্ধ তৎসম শব্দ, খাঁটি বাংলা শব্দ ও বিদেশি শব্দের বানান সম্পর্কে বিস্তারিত বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে । কিন্তু এসব বানান সম্পর্কে আমরা উদাসীন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পত্রিকা একাত্তরের এক পাঠক। তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ইংরেজি একটি শব্দের বানান আমরা ভুল লিখলে শিক্ষকসহ সবার কাছ থেকে ভৎসনা শুনতে হয়। পরীক্ষায় খাতায় ইংরেজি শব্দটি ভুল লেখার জন্য কোন নাম্বার দেয়া হয় না। অথচ বাংলা বানানের ক্ষেত্রে এসব দেখা হয় না যথাযথভাবে। তিনি হতাশা প্রকাশ করে আরো বলেন, অথচ বাংলা বানানের ক্ষেত্রে যত ভুল লিখি কোন সমস্যা নেই। কেউ টু শব্দও করে না।
বরিশাল ব্রজমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স-মাস্টার্স করা ইতিহাস- ঐতিহ্য- সংস্কৃতি ও সাহিত্য বিষয়ক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন 'মুক্তবুলি'র সম্পাদক সাংবাদিক আযাদ আলাউদ্দীন বলেন, আমাদের মাতৃভাষার প্রতি দরদ নিয়ে শিখতে হবে। দরদভরা মন নিয়ে শিখলে আমরা প্রমিত সঠিক বানানে বাংলা ভাষা লিখতে সক্ষম হব। এক্ষেত্রে আমাদের সবার আগে সচেতন হতে হবে । উদাসীনতা পরিহার করে একাগ্রচিত্তে শিখতে হবে এবং লিখতে হবে । ভুল বানানে লিখলে শব্দটি দেখতেও খারাপ দেখায়।
শশিভূষণ বেগম রহিমা ইসলাম কলেজের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রভাষক খন্দকার শাহিন আলম বলেন, ষ-ত্ব বিধান ও ণ- ত্ব বিধানের নিয়মসহ বিদেশী শব্দের বানানের কোন নিয়মের দিকে নজর নেই কারোই। অর্থের পরিবর্তনের জন্যও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বানানের যে পরিবর্তন হয় সে অর্থের দিকে খেয়াল রেখেও বানানেরই পরিবর্তন করে লিখতে হয়। যেমন- ক্রিয়াবাচক শব্দে 'ণ' মূর্ধ্যন্য হয় না ,'ন' দন্তন্য হয় ।বিশেষণসূচক শব্দে 'ন' দন্তন্য হয় না 'ণ' মূর্ধন্য হয়। উদাহরণ 'করুন' (কাজ অর্থে) করুণ (বিষাদময় অর্থে) সাধু - চলিত ভাষার মিশ্রণও যে দোষণীয় অনেকে সেদিকেও খেয়াল রাখে না। ভাষার মান রক্ষায় আমাদের শুদ্ধ বানানের প্রতি যত্নবান হওয়ার প্রতি তাগিদ দেন তিনি ।
পত্রিকা একাত্তর/ মো.নুর উল্লাহ আরিফ
সর্বত্র বাংলা বানানে নৈরাজ্য, সচেতনতা জরুরি বলে শিক্ষকদের অভিমত
১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২, ১ year আগে
